Wednesday 10 July 2024

কেন বিনিয়োগ এবং শিল্প পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যাচ্ছে?

আপনারা যারা নিয়মিত খবর দেখেন বা খবরাখবর রাখেন নিশ্চয়ই জানেন যে পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ এখন মোটেই শিল্পবান্ধব নয় | এটি এমন একটি রাজ্যে পরিণত হয়েছে যে এখানে নতুন কোন শিল্প বা বিনিয়োগ আসে না | বরঞ্চ হাতেগোনা যে কটি শিল্প বা কলকারখানা ছিল তারাও কারখানায় তালা লাগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের চলে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনিট ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যে গিয়ে নতুন করে খোলার জন্য | সিঙ্গুরের টাটা থেকে শুরু করে হলদিয়ার ABJ পর্যন্ত চলে যাওয়ার এরকম অনেক উদাহরণ আছে | Britannia এবং ECL কারখানা একই দিনে বন্ধ হয়ে যাওয়া- ওই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন | কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এমনটা হচ্ছে? আমরা যদি একটু গভীরে গিয়ে এর কারণ খুঁজতে যাই তাহলে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ উঠে আসে |

পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করা, বিনিয়োগ করা এবং উৎপাদন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদজনক

লোকাল সিন্ডিকেট  এবং শাসক দলের নিচু তলার নেতাদের মদদপুষ্ট গুন্ডা বাহিনীর দাপট পশ্চিমবঙ্গে শিল্পে বিনিয়োগের পরিস্থিতি এবং সম্ভাবনাকে অত্যন্ত প্রতিকূল এবং বিপজ্জনক করে তুলেছে | শিল্পপতিদের নিয়মিত হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত তলা তোলা, শ্রমিকদের প্ররোচিত ও উত্যক্ত করে তাদের ধর্মঘটে নামানো, এবং কারখানা নির্মাণে বাধা দিয়ে পয়সা আদায়ের নেশা শিল্পপতি, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে | তাই তারা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ, শিল্প স্থাপন, উৎপাদন, এবং ব্যবসা করতে ভয় পাচ্ছে | পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠিত শিল্পগুলি যেমন পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে গেছে এবং যাচ্ছে, তেমনই নতুন করে শুরু হওয়া ক্ষুদ্রশিল্পগুলিও এইসব প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার কারণে তাদের বিল্ডিং এবং প্রজেক্ট সাইটগুলি অসম্পূর্ণ রেখেই পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যে নতুন করে কারখানা স্থাপন করছে বা স্থাপন করার কথা ভাবছে | কারখানায় উৎপাদন শুরুর অনেক আগেই যখন তারা কারখানার বিল্ডিং গুলি নির্মাণ করার প্রয়াস নিচ্ছেন লোকাল শাসক দলের নেতা এবং সিন্ডিকেট চক্র ঠিক করে দিয়ে যাচ্ছেন যে শিল্পপতিরা কাদের কাছ থেকে কাঁচামাল এবং অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী (বালি, ইট, সিমেন্ট, রড) ক্রয় করবেন | তাই অনুন্নত মানের নির্মাণসামগ্রী হলেও তারা তারা লোকাল পার্টি এবং সিন্ডিকেটের ঠিক করে দেওয়া ব্যবসায়ী এবং ঠিকাদারের কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রী কিনতে বাধ্য হচ্ছেন | তাছাড়াও ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরা লোকাল শাসক দলের নেতা ও সিন্ডিকেটের ঠিক করে দেওয়া লোকজন ও  নির্মাণ সংস্থা কারীদের দিয়েই কাজ করাতে বাধ্য হচ্ছেন | এর ফলে তারা পশ্চিমবঙ্গকে কারখানা নির্মাণের সঠিক জায়গা বলে বিবেচনা করছেন না | এইসব কারণেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বহু ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প শুরু হতে পারেনি | আমরা বাস্তবিকভাবে এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি যখন আমরা বাঁকুড়া জেলাতে Creative Web Design Experts এর একটি নতুন করে ইউনিট খুলতে যাই | সেখানে শাসক দলের নিচুতলার নেতাকর্মীরা সরাসরি যুক্ত ছিল এবং তারা বড় অঙ্কের তোলা না পাওয়ায় আমাদের অফিস বিল্ডিং অনেকখানি ভেঙে দিয়েছিল | তাছাড়াও আমাদের কর্মচারীরা শাসক দলের নিয়মিত হুমকি, সন্ত্রাস ও আক্রমণের আক্রমণের শিকার হচ্ছিল | তাই বাধ্য হয়ে আমরা এই ইউনিটটি বন্ধ করে দিই | যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি বিশদে জানতে ও ওই সংক্রান্ত সমস্ত রকম নথি এবং কাগজপত্র খতিয়ে দেখে আমাদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে- সরাসরি ফোন করতে পারেন এই নাম্বার গুলিতে 9800842187/6291433677 | তাছাড়া আমাদের ইমেইল ও করতে পারেন  এই email আইডিতে sales@creativewebdesignexperts.com | আমাদের জানা আরো এরকম অনেক ঘটনা আছে বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর এবং দুর্গাপুরের উপকণ্ঠে | যেখানে নতুন Entrepreneur, ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরা উদ্যোগ নিয়ে বিনিয়োগ করতে চেয়েও সফল হননি এবং তাদের উৎপাদন শুরু করতে পারেননি | বাধ্য হয়ে তারা কারখানার বিল্ডিং এবং প্রজেক্ট সাইট গুলি অসম্পূর্ণ রেখে ওই শিল্পতালুক গুলি ছাড়তে বাধ্য হয় | এই পরিত্যক্ত বাড়ি গুলি এবং প্রজেক্ট সাইট গুলি বর্তমানে দুষ্কৃতকারী ও সমাজবিরোধীদের আড্ডা | এখান থেকেই তারা এখন নানারকম দুষ্কৃতি এবং অসামাজিক কার্যকলাপ চালায় |

দুর্বল এবং অনুন্নত পরিকাঠামো অশিল্পবান্ধব পরিবেশ

পশ্চিমবঙ্গে পরিকল্পিত ল্যান্ড ব্যাংকের অভাব (Land Bank), বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাব (Lack of Power Supply) অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত কাঁচামালের যোগানের অভাব এবং সর্বোপরি কর্মনাশা পরিবেশ পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গকে শিল্প এবং শিল্পপতিদের বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে |

শিল্পবিরোধী কর্মসংস্কৃতি

আমরা বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এক কর্মনাশা সংস্কৃতি পেয়েছি যা বয়কট, বনধ, হরতাল, এবং ধর্মঘটের রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে মদদ দেয় | তাই শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি শিল্পাঞ্চলে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং পশ্চিমবঙ্গকে একটি শিল্প বিরোধী রাজ্য হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে | তাই বহু ভারী শিল্প পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে ভয় পায় |

দক্ষ শ্রমিক মেধার অভাব

পশ্চিমবঙ্গের উন্নত মানের কলকারখানা, ভারী শিল্প, অনুসারী শিল্প এবং উপযুক্ত কাজের পরিবেশ না থাকায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উপযুক্ত জায়গায় কাজ করা, কাজ শেখা এবং কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে দক্ষ শ্রমিক হয়ে ওঠার কোন সুযোগ নেই | কোনো প্রফেশনাল ট্রেনিং এবং কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত দক্ষ শ্রমিক কখনোই পাওয়া যাচ্ছে না |

প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং কর্মনাশা সংস্কৃতির কারণে তরুণ মেধা (young talent) পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে চলে যাচ্ছে | মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এবং ভাবি এন্টারপ্রেনার তাদের পড়াশুনা সম্পূর্ণ করে- আর পশ্চিমবঙ্গে ফিরছে না | তারা ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত (settle) হয়ে যাচ্ছে |

বেকার সমস্যা

পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় এখানে বেকার সমস্যা প্রবলভাবে রয়েছে | পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত বেকাররা নিরুপায় হয়ে সিন্ডিকেট, রাজনৈতিক ছত্রছায়া, ও তোলাবাজিকে রোজগারের একমাত্র একমাত্র রোজগারের পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছে | তারা রোজগারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলির উপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে | সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটা এমন এক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে বিনিয়োগ, শিল্পস্থাপন এবং উৎপাদন অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে |

তাই কিছু উঁচু তলার রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা থাকলেও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, নিচু তলার নেতা এবং সিন্ডিকেট গুলির উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায়-পশ্চিমবঙ্গ এখন শিল্প এবং শিল্পপতিদের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে |


No comments:

Post a Comment